সজিনার পুষ্টি ও ব্যবহার
সজিনা একটি অতি পরিচিত দামি এবং সুস্বাদু
সবজি। সজিনার ইংরেজি নাম Drumstick এবং বৈজ্ঞানিক নাম Moringa Oleifera
উৎপত্তিস্থল পাক-ভারত উপমহাদেশ হলেও এ গাছ শীত প্রধান দেশ ব্যতীত সারা পৃথিবীতেই
জন্মে। বারোমাসি সজিনার জাত প্রায় সারা বছরই বার বার ফলন দেয়। গাছে সব সময় ফুল,
কচি পড দেখা যায়। আমাদের দেশে ২-৩ প্রকার সজিনা পাওয়া যায়। বসতবাড়ির জন্য সজিনা
একটি আদর্শ সবজি গাছ।
অত্যাশ্চার্য বৃক্ষ : দেশি-বিদেশি পুষ্টি
বিজ্ঞানীরা সজিনাকে অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ বা অলৌকিক বলে অভিহিত করেছেন। কারণ এর পাতায়
আট রকম অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডসহ ৩৮% আমিষ আছে যা বহু উদ্ভিদেই নেই। সজিনা সবজির
চেয়ে এর পাতার উপকার আরও বেশি। দক্ষিণ আফ্রিকায় এ গাছকে মায়েদের ‘উত্তম বন্ধু’ এবং
পুষ্টির এক অনন্য সহজলভ্য উৎস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
সজিনার পুষ্টি : বিজ্ঞানীরা পুষ্টির দিক দিয়ে সজিনাকে ‘পুষ্টির ডিনামাইট’ আখ্যায়িত
করে বলেন এ গাছটি থেকে পুষ্টি, ঔষধিগুণ ও সারা বছর ফলন পাওয়া যায় বিধায় বাড়ির আঙিনায় এটি একটি ‘মাল্টিভিটামিন বৃক্ষ’ এর পুষ্টিগুণ খাদ্যোপযোগী
প্রতি ১০০ গ্রামে খাদ্য শক্তি কি. ক্যাল ৪৩, পানি ৮৫.২ গ্রাম, আমিষ ২.৯ (গ্রাম), চর্বি ০.২ (গ্রাম), শর্করা ৫.১ (গ্রাম), খাদ্য আঁশ ৪.৮ (গ্রাম),
ক্যালসিয়াম ২৪ (মি. গ্রাম), আয়রন ০.২ (মি. গ্রাম), জিংক ০.১৬ (মি. গ্রাম), ভিটা-এ
২৬ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি১ ০.০৪ (মি. গ্রাম), ভিটা-বি২ (মি. গ্রাম) ০.০৪ ভিটামিন-সি ৬৯.৯ (মি. গ্রাম)। সূত্র বারটান/২০১৬
সজিনা পাতার গুণাগুণ : বিজ্ঞানীরা মনে করেন
সজিনার পাতা পুষ্টিগুণের আঁধার। নিরামিষভোগীরা সজিনার পাতা থেকে সবচেয়ে বেশি উপকৃত
হতে পারেন। পরিমাণের ভিত্তিতে তুলনা করলে একই ওজনের সজিনা পাতায় কমলা লেবুর ৭ গুণ
ভিটামিন-সি, দুধের ৪ গুণ ক্যালসিয়াম এবং দুই গুণ আমিষ, গাজরের ৪ গুণ ভিটামিন-এ,
কলার ৩ গুণ পটাশিয়াম বিদ্যমান। বিজ্ঞানীরা আরও বলেন, সজিনা পাতায় ৪২% আমিষ, ১২৫%
ক্যালসিয়াম, ৬১% ম্যাগনোসিয়াম, ৪১% পটাশিয়াম, ৭১% লৌহ, ২৭২% ভিটামিন-এ এবং ২২%
ভিটামিন-সি সহ দেহের আবশ্যকীয় বহু পুষ্টি উপাদান থাকে।
এক টেবিল চামচ শুকনা সজিনা পাতার গুঁড়া থেকে
১-২ বছর বয়সী শিশুদের অত্যবশ্যকীয় ১৪% আমিষ, ৪০% ক্যালসিয়াম ও ২৩% লৌহ ও ভিটামিন-এ সরবরাহ হয়ে থাকে। দৈনিক ৬ চামচ সজনে পাতার গুঁড়া একটি
গর্ভবর্তী বা স্তন্যদাত্রী মায়ের চাহিদার সবটুকু ক্যালসিয়াম ও আয়রন সরবরাহ করতে সক্ষম।
সজিনার তেল : সজিনার শুকানো বীজ ভাঙিয়ে
৩৮-৪০% ভোজ্যতেল পাওয়া যায় যাতে উচ্চ মাত্রার বিহ্যানিক এসিড থাকে যা বিভিন্ন
রোগের প্রতিষেধক। এ তেলের কোনো গন্ধ নাই এবং অন্য যে কোনো ভোজ্যতেলের মতোই মান
সম্পন্ন। তেল নিষ্কাশনের পর প্রাপ্ত খইল সার হিসেবে এবং পানি শোধনের কাজেও ব্যবহার
হয়।
সজিনার ঔষধি গুণাগুণ : ভারতীয় আয়ুর্বেদিক
শাস্ত্র মতে, সজিনা গাছ ৩০০ রকমের রোগ থেকে মানুষকে রক্ষা করে। আধুনিক বিজ্ঞানও এ
ধারণাকে সমর্থন করে। সজিনার কচি পড সবজি হিসেবে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়। সজিনার
বাকল, শিকড়, ফুল, ফল, পাতা, বীজ এমনকি এর আঠাতেও ঔষধিগুণ আছে।
০১. শরীর ব্যথা : শরীরের কোনো স্থানে ব্যথা
হলে বা ফুলে গেলে সজিনার শিকড়ের প্রলেপ দিলে ব্যথা ও ফোলা সেরে যায়।
০২. কান ব্যথা : সজিনার শিকড়ের রস কানে দিলে
কানের ব্যথা সেরে যায়।
০৩. মাথা ব্যথা : সজিনার আঠা দুধের সাথে
খেলে মাথা ব্যথা সেরে যায়। আঠা কপালে মালিশ করলে মাথা ব্যথা সেরে যায়।
০৪. ফোঁড়া সারায় : সজিনার আঠার প্রলেপ দিলে
ফোঁড়া সেরে যায়।
০৫. মূত্রপাথরি ও হাঁপানি : সজিনা ফুলের রস
দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে মূত্রপাথরি দূর হয়। ফুলের রস হাঁপানি রোগের বিশেষ উপকারী।
০৬. গ্যাস থেকে রক্ষা : সজিনা পাতার রসের
সাথে লবণ মিশিয়ে খেতে দিলে বাচ্চাদের পেট জমা গ্যাস দূর হয়।
০৭. কুকুরের কামড়ে : সজিনা পাতা পেষণ করে
তাতে রসুন, হলুদ, লবণ ও গোলমরিচ মিশিয়ে সেবন করলে কুকুরের বিষ ধ্বংস হয়।
০৮. জ্বর ও সর্দি : পাতার শাক খেলে
যন্ত্রণাধায়ক জ্বর ও সর্দি দূর হয়।
০৯. বহুমূত্র রোগ : সজিনা পাতার রসে
বহুমূত্র রোগ সারে।
১০. কোষ্ঠকাঠিন্য ও দৃষ্টিশক্তি : সজিনার
ফুল কোষ্ঠকাঠিন্য দোষ দূর করে এবং দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি করে।
১১. সজিনা ফুল দুধের সাথে রান্না করে নিয়মিত
খেলে কামশক্তির বৃদ্ধি ঘটে। এর চাটনি হজমশক্তি বৃদ্ধি করে।
১২. গেঁটে বাত : সজিনার ফল নিয়মিত রান্না
করে খেলে গেঁটে বাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
১৩. ক্রিমিনাশক ও টিটেনাস : সজিনার কচি ফল
ক্রিমিনাশক, লিভার ও প্লীহাদোষ নিবারক, প্যারালাইসিস ও টিটেনাস রোগে হিতকর।
১৪. অবশতা, সায়াটিকা : সজিনার বীজের তেল
মালিশ করলে বিভিন্ন বাত বেদনা, অবসতা, সায়াটিকা, বোধহীনতা ও চর্মরোগ দূর হয়।
১৫. পাতার রস হৃদরোগ চিকিৎসায় এবং রক্তের
প্রবাহ বৃদ্ধিতে ব্যবহার হয়।
১৬. পোকার কামড়ে এন্টিসেপ্টিক
হিসেবে সজিনার রস ব্যবহার করা হয়।
১৭. ক্ষতস্থান সারার জন্য সজিনা পাতার পেস্ট
উপকারী।
১৮. সজিনা শরীরের প্রতিরোধক ব্যবস্থা
শক্তিশালী করে। শরীর থেকে বিষাক্ত দ্রব্য, ভারি ধাতু অপসারণ এবং শরীরে রেডিয়েশন ও
কেমোথেরাপি নিতে সহায়তা করে।
১৯. ইন্টেস্টাইন ও প্রোস্টেট সংক্রমণ :
সজিনা বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের বিরুদ্ধে কাজ করে।
২০. শ্বাসকষ্ঠ, মাথা ধরা, মাইগ্রেন,
আর্থাইটিস এবং চুলপড়া রোগের চিকিৎসায় ও সজিনা কার্যকর ভূমিকা রাখে।
সজিনার ব্যবহার
সজিনা খাবার টেবিলে সবজি হিসেবেই
বেশি ব্যবহার হয়। মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত সজিনা বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়। এ সময় খরিপ সবজির মধ্যে সজিনার যথেষ্ট কদর থাকে। আগাম সজিনা বাজারে
নিতে পারলে আর্থিকভাবে প্রচুর লাভবান হওয়া যায়। সজিনা দিয়ে ডাল তরকারিটি সবচেয়ে
জনপ্রিয়। সজিনা শুধু ফল হিসেবেই
নয় সজিনার কচি পাতা ও ডাঁটা বা ডাল ভাজি বা তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। পালংশাকের বিকল্প
হিসেবে সজিনা শাক খাওয়া হয়। মুরগির মাংস রান্নায় কচি সজিনা পাতা সুস্বাদু লাগে।
কালিজিরা, কাঁচামরিচ, রসুনের সাথে সজিনা পাতার ভর্তা একটি মজাদার খাবার। ছোট মাছের
সাথে সজিনা পাতার চর্চড়ি খুবই উপাদেয়। সজিনা পাতার বড়া, সালাদ, পাতা বাটা ও সজিনা
পাতার পাউডার দ্বারা খাদ্য সুস্বাদু ও শক্তি বর্ধক হয়। যে কোনো স্যুপের সাথে শুকনা
সজিনা পাতার পাউডার মিশালে খাদ্যমান বেড়ে যায়। চা বা কফি তৈরিতে সজিনা পাতার
পাউডার ব্যবহার করা যায়। সজিনা থেকে তৈরি
কয়েকটি বিশেষ খাবারের রেসিপি হলো-
১. মসুর ডালে সজিনা : প্রথমে মসুর ডাল-১
কাপ, সজিনা- ১ কাপ, পেঁয়াজ কুচি, তেল, হলুদ গুঁড়া;, রসুন কুচি, মেথি, সরষে বাটা,
লবণ, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে। মসুর ডাল পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
তারপর হাঁড়িতে পানি চাপিয়ে তাতে মসুর ডাল, রসুন কুচি, হলুদ গুঁড়া দিয়ে ভালো করে
সেদ্ধ করতে হবে। অন্য পাত্রে তেল দিয়ে সজনে ভেজে তাতে মেথি দিয়ে তুলে নিয়ে পেঁয়াজ
কুচি বাদামি করে ভেজে তেলসহ ডালে ঢেলে দিতে হবে। কাঁচামরিচ কালি ও ধনেপাতা দিয়ে
চুলা থেকে নামাতে হবে।
২. সজিনা লাউ নিরামিষ : সজিনা ২৫০ গ্রাম,
লাউ- আধা কেজি, শুকনা শিমের বীচি-২ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, টমেটো-১টি, কাঁচামরিচ-২টি, ধনেপাতা পরিমাণমতো
নিতে হবে। সজিনার আঁশ ফেলে ১.৫-২ ইঞ্চি করে টুকরা করে নিতে হবে। একই সাথে টমেটো ও
লাউ টুকরো করতে হবে। শুকনো শিমের বীচি তাওয়ায় ভেজে পাটায় ভেঙে
খোসা ছাড়িয়ে নিতে হবে। তেলে পেঁয়াজ অল্প ভেজে রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, সজিনা ও লাউ দিয়ে
রান্না করতে হবে। শিমের বীচি দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখতে হবে এরপর টমেটো দিতে হবে।
লাউ ও সজিনা সেদ্ধ হলে, মরিচ ফালি ও ধনেপাতা কুচি দিয়ে ২-৩ মিনিট পর চুলা হতে
নামাতে হবে।
৩. সজিনা পাতার পাকোড়া : সজিনা পাতা-১০০
গ্রাম, মসুর ডাল-২০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ও আলু-২০০ গ্রাম করে, কাঁচামরিচ, ধনেপাতা, লবণ
ও তেল পরিমাণমতো। মসুর ডাল পরিষ্কার করে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সজিনা ডাঁটা
ভালো করে ধুয়ে কুচি, কুচি করে কাটাতে হবে। আলু, পেয়াজ, ধনেপতা, কাঁচামরিচ, সব কুচি
করে কেটে নিতে হবে। মসুরের ডাল হালকা করে বেটে নিতে হবে। ডালের সাথে কুচানো সজিনা
পাতা, আলু, পেঁয়াজ, কাঁচামরিচ ও ধনেপাতা ভালো করে মেশাতে হবে। চুলায় কড়াই বসিয়ে
তেল গরম করতে হবে। হাত দিয়ে গোল করে বড়ার মতো করে বানিয়ে তা গরম তেলে ভালোভাবে ভেজে
নিতে হবে। সস্ বা চাটনিসহ গরম গরম পাকোড়া পরিবেশন করতে হবে।
৪. আলু সজিনার তরকারি : সজিনা-৫০০ গ্রাম, আলু, পেঁয়াজ কুচি, রসুন বাটা, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া
ও কাঁচামরিচ পরিমাণমতো নিতে হবে। সজিনা ডাঁটার আঁশ ফেলে ২ ইঞ্চি লম্ব করে কেটে নিতে
হবে। আলুর খোসা ছিলে লম্বাকরে টুকরা করে কেটে নিতে হবে। তেলে রসুন বাটা, হলুদ
গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, লবণ দিয়ে সরষে বাটা, আলু, সজিনা দিয়ে চুলায় চড়াতে হবে। পরে
পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। সবজি সেদ্ধ হয়ে গেলে ধনেপাতা কুচি দিয়ে নামিয়ে নিতে হবে।
৫. সজিনা দিয়ে ইলিশ মাছ : ইলিশ মাছ-৪ টুকরা,
সজিনা ৪-৫টি, বড় পেঁয়াজ কুচি-১টি
কাঁচামরিচ, হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া, ধনিয়া গুঁড়া, জিরা বাটা, তেল ও লবণ পরিমাণ মতো
নিতে হবে। ইলিশ মাছের টুকরাগুলো ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সজিনাগুলো ১.৫-২ ইঞ্চি করে
কেটে নিতে হবে। কড়াইতে তেল গরম হলে পেঁয়াজ কুচি ও সব মসলা, লবণ কড়াইতে দিয়ে সজিনা
দিতে হবে। সজিনা দিয়ে অল্প কষিয়ে নিতে হবে। কষানো হলে তাতে মাছ দিতে হবে। তারপর
অল্প নাড়াচড়া করে পানি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ঝোল মাখা মাখা হলে নামানোর আগে
কাঁচামরিচ দিয়ে নামাতে হবে।
৬. চিংড়ি নারিকেলে সজিনা মালাইকারি : সজিনা
২৫০ গ্রাম, চিংড়ি-১৫/২০টি (মাঝারি আকৃতির), নারিকেল বাটা-আধা কাপ, চিনি-১ চা চামচ,
কাঁচামরিচ-২/৩টি, পরিমাণমতো পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা, তেজপাতা, তেল, হলুদ গুঁড়া নিতে
হবে। প্রথমে চিংড়ির মাথা ও ভেতরের কালো রগ ফেলে ধুয়ে সজিনার আঁশ ফেলে টুকরো করে
রাখতে হবে। নারিকেল বেটে নিতে হবে। তেল গরম হলে তেজপাতা, পেঁয়াজ বাটা, আদা বাটা,
আস্ত চিংড়ি দিয়ে নেড়ে চেড়ে সজিনা ভেজে নিতে হবে। পানি দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। এরপর
বাটা নারিকেল, সামান্য চিনি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। ২০ মিনিট রান্নার পর নামানোর
পূর্বে কাঁচামরিচ দিয়ে নামাতে হবে।
৭. আম সজিনার ঝোল : সজিনা ভাটা-২৫০ গ্রাম,
কাঁচা আম-৬-৭ টুকরা, পেঁয়াজ বাটা, পাঁচ ফোড়ন, রসুন বাটা, কাঁচামরিচ, সরিষার তেল,
হলুদ গুঁড়া ও লবণ পরিমাণমতো। প্রথম সজিনা ডাঁটার আঁশ ফেলে টুকরা করতে হবে। কাঁচা
আমের ওপরের সবুজ ত্বক ফেলে লম্বা করে কাটতে হবে। কাঁচামরিচ বেটে নিতে হবে। তেল গরম
হলে পেঁয়াজ বাটা, পাঁচ ফোড়ন বাটা, হলুদ ও রসুন বাটা দিয়ে কষাতে হবে। এরপর সজিনা
ডাঁটা ও লবণ দিয়ে ২ কাপ পানি দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে দিতে হবে। সজিনা সেদ্ধ হলে আমের
টুকরা ও মরিচ বাটা দিয়ে জ্বাল দিতে হয়। তেল ওপরে ভেসে উঠলে নামিয়ে ফেলতে হবে।
৮. দই সজিনা : সজনে-৫০০ গ্রাম টকদই-২০০
গ্রাম, রসুন আদা, কাঁচামরিচ বাটা, হলুদ গুঁড়া ও তেজপাতা পরিমাণমতো নিতে হবে। সজনে
ডাঁটার আঁশ ফেলে ১.৫ ইঞ্চি করে টুকরা করে নিতে হবে। তেলে তেজপাতা ভেজে পেঁয়াজ
বাটা, রসুন বাটা, আদা বাটা, হলুদ গুঁড়া ও লবণ দিয়ে কষিয়ে সজিনা ঢেলে দিতে হবে।
ভালোভাবে নেড়ে টক দই দিয়ে অল্প পানি সহযোগে ২০ মিনিট পর নামাতে হবে।
৯. সজনে পাতার সবুজ ভাত : চাল-৪০০ গাম,
মুগডাল-২০০ গ্রাম, সজনে পাতা-২০০ গ্রাম, সেদ্ধ ডিম-৩টি, টমেটো, শসা, পেঁয়াজ, রসুন,
আদা, ধনেপাতা, কাঁচামরিচ, তেজপাতা, গরম মসলা, লবণ, সয়াবিন তেল, লেবু পরিমাণমতো নিতে
হবে। প্রথমে চাল ও ডাল ধুয়ে পরিষ্কার করতে হবে। সজনে পাতা ধুয়ে পরিষ্কার করে কেটে
কুচি কুচি করতে হবে। পেঁয়াজ ও ধনেপাতা কুঁচি করতে হবে। সেদ্ধ ডিমের খোসা ছাড়িয়ে
টমেটো ও শসার সাথে সøাইস করতে হবে। আদা, রসুন ও কাঁচামরিচ
বেটে নিতে হবে। চুলায় কড়াই চাপিয়ে তেল গরম হলে পেঁয়াজ ভাজতে হবে। এরপর চাল ও ডাল ২
মিনিট জ্বাল দিতে হবে। তারপর আদা, রসুন, কাঁচামরিচ বাটা ও তেজপাতা দিয়ে ভালোভাবে
মিশাতে হবে। তারপর সজিনা পাতা যোগ করতে হবে। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ২০ মিনিট জ্বাল
দিলে সব সেদ্ধ হয়ে পানি শুকিয়ে যাবে। কুচানো ধনেপাতা ও গরম মসলা দিয়ে নেড়ে দিতে
হবে। ডিম, টমেটো, শসা ও লেবু দিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
১০. সজনে পাতার সবুজ রুটি : গমের আটা-৫০
গ্রাম, বেসন-২০ গ্রাম, সজিনা পাতা-২৫ গ্রাম, পেঁয়াজ-২৫ গ্রাম এর সাথে আদা জিরা,
কাঁচামরিচ, তেল, লবণ পরিমাণমতো নিতে হবে। প্রথমে সজিনা পাতা পরিষ্কার করে ধুয়ে
বেটে নিতে হবে। আদা, পেঁয়াজ কুচি করে কেটে নিতে হবে। জিরা ভেজে গুঁড়া করে নিতে
হবে। এবার আটার সাথে বেসন ভালো করে মেশাতে হবে। একে একে মিশ্রণের সাথে সজিনা পাতা,
পেঁয়াজ, মরিচ, আদা ও অন্যান্য মসলা মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে রুটি তৈরির খামির
বানাতে হবে। কিছুক্ষণ খামির রেখে দিয়ে রুটির গোলা তৈরি করে রুটি বেলে নিতে হবে।
চুলায় তাওয়া গরম করে সাধারণ রুটির মতো সবুজ রুটি ভেজে নিতে হবে।
১১. পেলকা : সজিনা পাতার তৈরি দিনাজপুরের
গ্রামীণ সমাজের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও উপাদেয় খাবারের নাম হচ্ছে পেলকা। পরিমাণমতো
সজিনা পাতা, খাবার সোডা এক চিমটি, রসুন ১টি কাঁচামরিচ ও লবণ স্বাদমতো নিতে হবে।
ডেকচিতে ২-৩ লিটার পানি চাপিয়ে পরিমাণমতো লবণ দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। সজিনা পাতা
পরিষ্কারভাবে ধুয়ে কুচি কুচি করে কেটে নিতে হবে। চুলায় পানি ফুটলে পাতাগুলো ফুটন্ত
পানিতে ঢেলে দিতে হবে। এরপর আদা, রসুন কাঁচামরিচ ও সামান্য পরিমাণ খাবার সোডা দিয়ে
নেড়ে নিতে হবে। পাতিলের তলায় যেন না লাগে সেজন্য চামচ দিয়ে নাড়তে হবে। মিশ্রণটি ঘন
হয়ে এলে নামিয়ে পরিবেশন করতে হবে।
সজিনা গাছের
পুষ্টিমান, ঔষধিগুণ ও খাদ্য হিসেবে ব্যবহার অনুশীলন করে স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য আরও
ব্যাপকভাবে সজিনার ফল, টাটকা ও শুকনা পাতা ব্যবহার বৃদ্ধি করা উচিত। সারা বছর এ সবজি খাওয়ার অভ্যাস বাড়ানো উচিত। তাই এর চাষ পদ্ধতি ও গুণাগুণ
মিডিয়ার মাধ্যমে সারা দেশের জনগণের নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য সব পুষ্টিবিজ্ঞানী,
সাংবাদিক, কৃষিবিদ ও সরকারি কর্মকর্তা/কর্মচারী, শিক্ষক ও আপামর জনসাধারণের
অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। এতেই সজিনা গাছের নামকরণ অত্যাশ্চর্য বৃক্ষ হিসেবে সার্থকতা
পাবে।
[কৃতজ্ঞতাঃ কৃষিবিদ মো. মোশাররফ হোসেন*
*অতিরিক্ত পরিচালক, ডিএই, খামারবাড়ি]
উত্তর সমূহ